বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭

মাগরিবের ছলাতের ন্যায় বিতর পড়া ও না পড়ার দলীল সমূহের পর্যালোচনা

মাগরিবের ছলাতের ন্যায় বিতর পড়া ও না পড়ার দলীল সমূহের পর্যালোচনা




বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
মাগরিবের ছলাতের ন্যায় বিতর না পড়াঃ এই মতটি ছহীহ…
হাদীছ নং ১:
أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، أنبأ أَبُو نَصْرٍ أَحْمَدُ بْنُ سَهْلٍ الْفَقِيهُ بِبُخَارَى، ثنا صَالِحُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ حَبِيبٍ الْحَافِظُ، ثنا شَيْبَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، ثنا أَبَانُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ زُرَارَةَ بْنِ أَوْفَى، عَنْ سَعْدِ بْنِ هِشَامٍ، عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ بِثَلَاثٍ لَا يَقْعُدُ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ
আ’য়িশাহ(রা) বলেন, রসূল(স) তিন রাক’আত বিতর পড়তেন। কিন্তু তিনি শেষ রাক’আত ছাড়া বসতেন না। (মুস্তাদরাক হাকিম, ১/৩০৪, হা/১১৪০; বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৪৮০৩; ফাতহুল বারী, হা/৯৯৮ এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)

ইমাম হাকিম এর মুস্তাদরাকে (হা/১১৪০) لَا يُسَلِّمُ (সালাম ফিরাতেন না) ছাপানো হয়েছে। কিন্তু আসলে হবে لَا يَقْعُدُ (বসতেন না)। কেননা ইমাম বাইহাক্বী (সুনানুল কুবরা, হা/৪৮০৩) ইমাম হাকিম থেকে এই হাদীছ উল্লেখ করেছেন যেখানে لَا يَقْعُدُ (বসতেন না) আছে। এমনকি ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী ইমাম হাকিম থেকে এই হাদীছ ফাতহুল বারী (হা/৯৯৮ এর আলোচনা দ্রষ্টব্য) তে এনেছেন। তিনিও لَا يَقْعُدُ (বসতেন না) এভাবে উল্লেখ করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ
ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী এই হাদীছ ফাতহুল বারী (হা/৯৯৮ এর আলোচনা দ্রষ্টব্য) তে এনেছেন এবং কোন সমালোচনা করেননি। আর যেসব হাদীছ তিনি ফাতহুল বারীতে এনেছেন, সেগুলো তার কাছে ছহীহ অথবা হাসান যেমনটি তিনি ফাতহুল বারীর ভূমিকাতে লিখেছেন। (ইবনে হাজার আসক্বালানী, ফাতহুল বারী, ভূমিকা দ্রষ্টব্য; যাফার আহমাদ থানভী, ক্বওয়ায়িদ ফী উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ৮৯)
কিন্তু এই হাদীছের রাবী ক্বাতাদাহ মুদাল্লিস ছিলেন। (ইবনে হাজার আসক্বালানী, ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, রাবী নং ৯২)
আর একজন মুদাল্লিসের হাদীছ তখনই গ্রহণ করা যাবে যখন উক্ত রাবী ‘হাদ্দাছানা’ বা ‘সামি’তু’ বা ‘আখবারানা’ বা ‘ছানা’ বলবে অথবা উক্ত রাবীর বর্ণিত হাদীছের শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ থাকবে।
এই হাদীছের কিছু শাওয়াহিদ হাদীছ রয়েছে। তাই শাওয়াহিদ হিসেবে এই হাদীছটি ছহীহ। আলহামদুলিল্লাহ
হাদীছ নং ২:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سُلَيْمَانَ بْنِ الْأَشْعَثِ , ثنا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ , ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ , أَنْبَأَ سُلَيْمَانُ بْنُ بِلَالٍ , ح وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ النَّيْسَابُورِيُّ , ثنا مَوْهَبُ بْنُ يَزِيدَ بْنِ خَالِدٍ , ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ , حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ بِلَالٍ , عَنْ صَالِحِ بْنِ كَيْسَانَ , عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْفَضْلِ , عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ الْأَعْرَجِ , عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ , عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا تَوْتِرُوا بِثَلَاثٍ , أَوْتِرُوا بِخَمْسٍ , أَوْ بِسَبْعٍ وَلَا تَشَبَّهُوا بِصَلَاةِ الْمَغْرِبِ
রসূল(স) বলেন, তোমরা তিন রাক’আত বিতর আদায় করো না, বরং পাঁচ অথবা সাত রাক’আত আদায় করো। আর তা (বিতর) মাগরিবের ছলাতের ন্যায় আদায় করো না। (দারাক্বুত্বনী, হা/১৬৫০; মুস্তাদরাক হাকিম, ১/৩০৪, হা/১১৩৮; ইবনে হিব্বান, হা/২৪২৯; বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৪৮১৫)
ইমাম দারাক্বুত্বনী বলেন, এর রাবীগণ ছিক্বাহ। (দারাক্বুত্বনী, হা/১৬৫০)
ইমাম হাকিম তার মুস্তাদরাকে (হা/১১৩৮) শাইখাইনের শর্তে ছহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন।
ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী বলেন, এর রাবীগণ ছিক্বাহ। (ইবনে হাজার আসক্বালানী, তালখীছুল হাবীর, হা/৫১২)
ইমাম নাছিরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদীছটি ছহীহ। (নাছিরুদ্দীন আলবানী, আত-তা’লীক্বাতুল হিসান আ’লা ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৪২০)
শু’আইব আরনাউত্ব বলেন, এর সানাদ ছহীহ। (শু’আইব আরনাউত্ব, তাহক্বীক্ব ইবনে হিব্বান, হা/২৪২৯)
হুসাইন সালিম আসাদ দারানী বলেন, এর সানাদ ছহীহ। (হুসাইন সালিম আসাদ দারানী, তাহক্বীক্ব মাওয়ারীদুয যামান ইলা যাওয়ায়িদ ইবনে হিব্বান, হা/৬৮০)
মাজদী ইবনে মানছূর ইবনে সাঈদ আশ-শাওরী বলেন, এর সানাদ ছহীহ। (মাজদী ইবনে মানছূর ইবনে সাঈদ আশ-শাওরী, তাহক্বীক্ব দারাক্বুত্বনী, হা/১৬৩৪)
সুতরাং, এই হাদীছটি নিঃসন্দেহে ছহীহ। আলহামদুলিল্লাহ
হাদীছ নং ৩:
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ، قَالَا: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ نُمَيْرٍ، ح وحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُوتِرُ مِنْ ذَلِكَ بِخَمْسٍ، لَا يَجْلِسُ فِي شَيْءٍ إِلَّا فِي آخِرِهَا
আ’য়িশাহ(রা) বলেন, রসূল(স) রাতে তের রাক’আত ছলাত আদায় করতেন। এর মধ্যে পাঁচ রাক’আত বিতর পড়তেন। কিন্তু তিনি শেষ রাক’আত ছাড়া বসতেন না। (মুসলিম, হা/১৭২০; হাএ, হা/১৬০৫)
যেহেতু রসূল(স) পূর্বের হাদীছে পাঁচ অথবা সাত রাক’আত বিতর আদায় করতে বলেছেন এবং মাগরিবের অনুরূপ করতে নিষেধ করেছেন, সেহেতু এই হাদীছ দ্বারা এটিই প্রমাণিত হয় যে, তিন রাক’আতেও শেষ রাক’আত ব্যতীত বসা উচিত নয়। আল্লাহু আ’লাম
কেননা এইভাবে (শুধু শেষ রাক’আতে বসে) তিন রাক’আত বিতর আদায় করলে তা মাগরিবের অনুরূপ হয় না। আলহামদুলিল্লাহ
হাদীছ নং ৪:
عَبْدُ الرَّزَّاقِ ،عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ: أَنَّهُ كَانَ يُوتِرُ بِثَلَاثٍ لَا يَقْعُدُ بَيْنَهُنَّ
ইবনে ত্বাউস(র) বলেন, তার পিতা ত্বাউস(র) তিন রাক’আত বিতর পড়তেন কিন্তু তিনি মাঝে বসতেন না। (মুছান্নাফ আবদুর রাযযাক, ৩/২৭, হা/৪৬৬৯)
ত্বাউস(র) একজন বিখ্যাত তাবিঈ, ফক্বীহ, ইমাম, হাফিয ছিলেন। (যাহাবী, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ৫/৩৮, রাবী নং ১৩)
উক্ত মাকতূ হাদীছটির সানাদ ছহীহ। আলহামদুলিল্লাহ
হাদীছ নং ৫:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ صَالِحِ بْنِ هَانِئٍ، ثنا الْحَسَنُ بْنُ الْفَضْلِ، ثنا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَسُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَا: ثنا جَرِيرُ بْنُ حَازِمٍ، عَنْ قَيْسِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ عَطَاءٍ، أَنَّهُ كَانَ يُوتِرُ بِثَلَاثٍ لَا يَجْلِسُ فِيهِنَّ، وَلَا يَتَشَهَّدُ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ
ক্বাইস ইবনে সা’দ(র) বলেন, আ’ত্বা(র) তিন রাক’আত বিতর পড়তেন কিন্তু তিনি মাঝে বসতেন না। আর তিনি শেষ রাক’আত ছাড়া তাশাহহুদ পড়তেন না। (মুস্তাদরাক হাকিম, ১/৩০৫, হা/১১৪২)
আ’ত্বা(র) একজন বিখ্যাত তাবিঈ, ফক্বীহ, ইমাম ছিলেন। (যাহাবী, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ৫/৭৮, রাবী নং ২৯)
উক্ত মাকতূ হাদীছটির সানাদ ছহীহ। আলহামদুলিল্লাহ
মাগরিবের ছলাতের ন্যায় বিতর পড়াঃ এই মতটি দুর্বল…
হাদীছ নং ১:
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ رُشَيْقٍ بِمِصْرَ , ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ حَمَّادٍ الدُّولَابِيُّ , ثنا أَبُو خَالِدٍ يَزِيدُ بْنُ سِنَانٍ , ثنا يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا الْكُوفِيُّ , ثنا الْأَعْمَشُ , عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحَارِثِ , عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ النَّخَعِيِّ , عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ , قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وِتْرُ اللَّيْلِ ثَلَاثٌ كَوِتْرِ النَّهَارِ صَلَاةُ الْمَغْرِبِ
রসূল(স) বলেন, রাতের তিন রাক’আত বিতর, দিনের বিতর মাগরিবের ছলাতের ন্যায়। (দারাক্বুত্বনী, হা/১৬৫৩)
মাজদী ইবনে মানছূর ইবনে সাঈদ আশ-শাওরী বলেন, এর সানাদ দুর্বল। কেননা ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া ইবনে আবুল হাওয়াজিব দুর্বল। (মাজদী ইবনে মানছূর ইবনে সাঈদ আশ-শাওরী, তাহক্বীক্ব দারাক্বুত্বনী, হা/১৬৩৭)
এই হাদীছের রাবী ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া ইবনে আবুল হাওয়াজিব দুর্বল। (যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল, রাবী নং ৯৫০৭; ইবনে হাজার আসক্বালানী, লিসানুল মীযান, রাবী নং ৮৯৯)
ইমাম দারাক্বুত্বনী বলেন, তিনি দুর্বল। (দারাক্বুত্বনী, হা/১৬৫৩)
ইমাম বাইহাক্বী বলেন, তিনি দুর্বল। (বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৪৮১২)
এই হাদীছের অপর রাবী ইবনে হাম্মাদ দুলাবী সমালোচিত ব্যক্তি। (যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল, রাবী নং ৭১৫১; ইবনে হাজার আসক্বালানী, লিসানুল মীযান, রাবী নং ১৪২)
এই হাদীছের অপর রাবী আ’মাশ মুদাল্লিস ছিলেন। (ইবনে হাজার আসক্বালানী, ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, রাবী নং ৫৫)
আর একজন মুদাল্লিসের হাদীছ তখনই গ্রহণ করা যাবে যখন উক্ত রাবী ‘হাদ্দাছানা’ বা ‘সামি’তু’ বা ‘আখবারানা’ বা ‘ছানা’ বলবে অথবা উক্ত রাবীর বর্ণিত হাদীছের শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ থাকবে। কিন্তু উক্ত হাদীছের কোন শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ নেই। যেগুলো রয়েছে তা সবই দুর্বল।
এছাড়াও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা) থেকে এই হাদীছের অপর একটি শাওয়াহিদ হাদীছ রয়েছে। (ত্বাবারাণী, মু’জামুল কাবীর, ৯/২৮২, হা/৯৪২১)
এই হাদীছের রাবী আ’মাশ মুদাল্লিস ছিলেন। (ইবনে হাজার আসক্বালানী, ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, রাবী নং ৫৫)
এই হাদীছের অপর রাবী হাজ্জাজ ইবনে আরত্বাহ দুর্বল। (মিযযী, তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ১১১২)
এছাড়াও তিনি মুদাল্লিস ছিলেন। (ইবনে হাজার আসক্বালানী, ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, রাবী নং ১১৮)
আর একজন মুদাল্লিসের হাদীছ তখনই গ্রহণ করা যাবে যখন উক্ত রাবী ‘হাদ্দাছানা’ বা ‘সামি’তু’ বা ‘আখবারানা’ বা ‘ছানা’ বলবে অথবা উক্ত রাবীর বর্ণিত হাদীছের শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ থাকবে। কিন্তু উক্ত হাদীছের কোন শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ নেই। যেগুলো রয়েছে তা সবই দুর্বল।
সুতরাং, উক্ত হাদীছটি ছহীহ নয়। আলহামদুলিল্লাহ
হাদীছ নং ২:
أَنْبَأَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ قَالَ أنبأنا الجوهري عن الدارقطني عَنْ أَبِي حَاتِمِ بْنِ حَبّانَ قَالَ نا أَحْمَدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ زُهَيْرٍ قَالَ نا عَبْدُ الله الْعَطَّارُ قَالَ نا أَبُو بَكْرٍ الْبَكْرَاوِيُّ عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ مُسْلِمٍ عَنِ الْحَسَنِ عَنْ سَعِيدِ بْنِ هِشَامٍ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْوِتْرُ ثَلاثُ رَكْعَاتٍ كَصَلاةِ الْمَغْرِبِ
রসূল(স) বলেন, মাগরিবের ছলাতের ন্যায় বিতরের ছলাত তিন রাক’আত। (ইবনুল জাওযী, আল-ঈলালুল মুতানাহিয়াহ, হা/৭৭২; ইবনে হিব্বান, আল-মাজরূহীন, ১/১২১, রাবী নং ৩৬ এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)
ইমাম ইবনুল জাওযী বলেন, এই হাদীছটি ছহীহ নয়। (ইবনুল জাওযী, আল-ঈলালুল মুতানাহিয়াহ, হা/৭৭২)
এই হাদীছের রাবী ইসমাঈল ইবনে মুসলিম দুর্বল। (মিযযী, তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ৪৮৩)
এই হাদীছের অপর রাবী আবদুর রহমান ইবনে উছমান আবু বাকর বাকরাভী দুর্বল। (মিযযী, তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ৩৮৯৭)
এই হাদীছের অপর রাবী হাসান বাছরী মুদাল্লিস ছিলেন। (ইবনে হাজার আসক্বালানী, ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, রাবী নং ৪০)
আর একজন মুদাল্লিসের হাদীছ তখনই গ্রহণ করা যাবে যখন উক্ত রাবী ‘হাদ্দাছানা’ বা ‘সামি’তু’ বা ‘আখবারানা’ বা ‘ছানা’ বলবে অথবা উক্ত রাবীর বর্ণিত হাদীছের শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ থাকবে। কিন্তু উক্ত হাদীছের কোন শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ নেই। যেগুলো রয়েছে তা সবই দুর্বল।
সুতরাং, উক্ত হাদীছটি ছহীহ নয়। আলহামদুলিল্লাহ
হাদীছ নং ৩:
مَالِكٌ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ دِينَارٍ؛ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَقُولُ: صَلاَةُ الْمَغْرِبِ وِتْرُ صَلاَةِ النَّهَارِ
আবদুল্লাহ ইবনে উমার(রা) বলেন, মাগরিবের ছলাত দিনের বিতর ছলাতের ন্যায়। (মুওয়াত্ত্বা মালিক, হা/৪০৮)
উক্ত মাওক্বূফ হাদীছটির সানাদ ছহীহ। আলহামদুলিল্লাহ
কিন্তু উক্ত হাদীছটি মারফূ হাদীছের বিপরীত। তাই এই হাদীছটি দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যাবে না। আল্লাহু আ’লাম
রসূল(স) বলেন, তোমরা তিন রাক’আত বিতর আদায় করো না, বরং পাঁচ অথবা সাত রাক’আত আদায় করো। আর তা (বিতর) মাগরিবের ছলাতের ন্যায় আদায় করো না। (দারাক্বুত্বনী, হা/১৬৫০; মুস্তাদরাক হাকিম, ১/৩০৪, হা/১১৩৮; ইবনে হিব্বান, হা/২৪২৯; বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৪৮১৫)
বিস্তারিত দেখুন (মাগরিবের ছলাতের ন্যায় বিতর না পড়া) হাদীছ নং ২ এর আলোচনা।
সুতরাং, মাগরিবের ছলাতের ন্যায় বিতর পড়া উচিত নয়। তাই আমাদের সকলের উচিত তাক্বলীদ মুক্ত হয়ে ক্বুর’আন ও ছহীহ হাদীছ দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করা এবং মেনে চলা। আল্লাহ আমাদের সকলকে হিদায়াত দান করুক। আমীন
© Shottanneshi – সত্যান্বেষী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন